নিউজডেস্ক : বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে গ্রেফতারে জারি করা পরোয়ানা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সোমবার বিকাল ৩ টায় ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের আদেশের কপিসহ এ পরোয়ানা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের একটি সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত রোববার দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজলের আবেদনক্রমে ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ মো. মোজাম্মেল হক এ পরোয়ানা জারি করেন।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ইংরেজিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার করে এ মামলায় আদালতে হাজির করে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য এ আবেদন করেছিল দুদক। আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, দুদকের অর্থপাচার মামলায় ২০১১ সালের ৮ আগষ্ট তারেকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তারেক রহমান এ পরোয়ানা জারির কথা জানেন। কিন্তু তিনি গ্রেফতার এড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে বিদেশে অবস্থান করছেন।বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী তারেক রহমান বর্তমানে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থান করছেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে এরইমধ্যে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের সকল পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। তাতে সফল না হওয়ায় তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার করে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করা আবশ্যক। ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় তারেক ও তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন মামুনের বিরুদ্ধে এই মামলা করে দুদক। পরের বছর ৬ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এক ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে।
এদিকে, তারেক জিয়া রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। সে কারণে তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রশ্নই আসে না বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ সলিসিটর বিপ্লব কুমার পোদ্দার। তিনি বলেন, “তারেক জিয়া এদেশে (ব্রিটেন) রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। তাকে চাইলেও ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারবে না।” তিনি বলেন, “তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ইন্টারপোলের সাহায্য চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার, তা বাস্তবসম্মত নয়।” সলিসিটর বিপ্লব পোদ্দার বলেন, “চাইলেই ইন্টারপোল রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা কাউকে গ্রেফতার করে দেশে পাঠাতে পারে না। কারণ, রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকলে ব্রিটিশ আইনে কাউকে তার নিজের দেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।” আদালত রোববার বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনার জন্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
তিনি বলেন, “ব্রিটিশ সরকার যদি বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ অনুযায়ী ইন্টারপোলের কাছে হস্তান্তর করতে চায়, তাহলে ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ, রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের আইনের আর্টিকেল ২, ৩ ও ৬ ধারা পরিবর্তন করতে হবে।” তিনি বলেন, “এই ধারায় পরিবর্তনে আনা হলে শত শত রাজনৈতিক আশ্রয় লাভকারীকে তাদের দেশে পাঠিয়ে দিতে হবে।” তিনি বলেন, “সরকার আসলে ভ্রান্ত ধারণার ভিত্তিতে এ পদক্ষেপ নিয়েছে। তারেক জিয়া ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী এদেশে বসবাস করছেন। সুতরাং ইন্টারপোল চাইলেও তারেক জিয়াকে গ্রেফতার করে দেশে পাঠাতে পারবে না।”
তারেক প্যারোলে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেছেন এবং তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে, তাহলে তাকে কেন বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো যাবে না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তারেক জিয়া যে ভিসা নিয়েই আসুন না কেন, তিনি তো ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। সুতরাং সে কারণে তাকে বাংলাদেশে পাঠানো সম্ভব হবে না।” গ্রেফতারি পরোয়ানা সম্পর্কে তারেক জিয়ার মন্তব্য কী জানতে চাইলে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর তারেক জিয়ার সঙ্গে এবিষয়ে কোনো কথা বলার সুযোগ হয়নি।”
এদিকে, লন্ডনে অবস্থানকারী তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতাদের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করা হলে বিএনপির কোনো নেতাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। আর তাছাড়া সেখানে বিএনপির কোনো কমিটি গঠিত হয়নি। তবে লন্ডনে বসবাসকরী বিএনপির সাবেক আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাহিদুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “বর্তমান সরকার তারেক জিয়ার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এটা আইনসম্মত কিংবা গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি বলেন, “ওয়ান-ইলেভেনের পর তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে, তার একটাও প্রমাণ করতে পারেনি সরকার। এটা সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।”
অপরদিকে, যুক্তরাজ্য আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশরাফুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “তারেক জিয়াকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফেরত নিতে উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। তবে তারেক জিয়াও নিজেকে ‘প্রটেক্ট’ করার অধিকার রাখেন। লন্ডনে চিকিৎসা নিতে এসে তারেক জিয়া এদেশে রাজনীতি করছেন। আমরা ব্রিটিশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবো, যাতে করে তারেক জিয়ার ওপর এদেশের সরকারের আস্থা না থাকে।”
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতার জন্য ও ব্রিটিশ প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি নেবো। এর মধ্যে সমাবেশ, মানববন্ধন, স্মারকলিপিসহ অন্যান্য কর্মসূচিও রয়েছে।” তিনি তারেক জিয়ার উদ্দেশে জানতে চান, “অসুস্থ ও রাজনৈতিক আশ্রয়ে থেকে তিনি কীভাবে এখানে রাজনীতি করতে পারেন!”