শনিবার, ৪ মে, ২০১৩

হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি শুরু

ঢাকা: ১৩ দফা দাবিতে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। রোববার ভোর ৬টা থেকে অবরোধ শুরুর কথা থাকলেও ফজরের নামাজ পড়েই ঢাকার প্রবেশমুখ নির্দিষ্ট ৬টি পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন হেফাজত নেতাকর্মীরা।    এ অবরোধ শেষ হওয়ার সময়সীমা না দিয়ে হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নির্দেশে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
তবে বিকেল ৪টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যদিও পুলিশ প্রশাসন সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। নেতারা জানান, রাজধানীর ৬টি পয়েন্টে অবরোধ করছেন হেফাজত কর্মীরা। এগুলো হলো যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর, যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা, পোস্তগোলার বুড়িগঙ্গা সেতু, পুরান ঢাকার বাবুবাজার সেতু, উত্তরা থেকে টঙ্গী-আবদুল্লাপুর পর্যন্ত এবং গাবতলী-আমিনবাজার থেকে বলিয়ারপুর পর্যন্ত। কর্মসূচি চলাকালে বাইরে থেকে কোনো যানবাহন রাজধানীতে ঢুকতে দেওয়া হবে না এবং রাজধানী থেকেও কোনো যানবাহন বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। তবে রাজধানীর ভেতরে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন হেফাজত নেতারা।

হেফাজতের পক্ষ থেকে আরও বলা হচ্ছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশ থেকে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন এবং সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করবে তারা। এদিকে এ অবরোধকে ঘিরে টান টান উত্তেজনা শুরু হয়েছে। সারা দেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার এ কর্মসূচি নিয়ে দারুণ উৎকণ্ঠায় কাটাচ্ছে দেশবাসী। হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী জানিয়েছেন, সাভার ট্র্যাজেডির সঙ্গে সম্পৃক্ত লাশবাহী গাড়ি, সংবাদপত্র, অ্যাম্বুলেন্স, উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত সব ধরনের যানবাহন, দেশি-বিদেশি পরিদর্শকদের গাড়িসহ এ জাতীয় যানবাহন অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে।

মহানবী (সা.), আল্লাহ ও ইসলামের অবমাননাকারী `নাস্তিক` ব্লগারদের শাস্তি, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল, ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়ন, ‘ইসলামবিরোধী’ নারীনীতি ও শিক্ষানীতি বাতিলসহ ১৩ দফা দাবিতে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধের ডাক দেয়। ঢাকায় গত ৬ এপ্রিল লংমার্চের পর মহাসমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে হেফাজতে ইসলাম। হেফাজত নেতারা দাবি করেছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কয়েক লাখ হেফাজত নেতাকর্মী অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। কালেমা খচিত পতাকাসহ চিঁড়া, মুড়ি, পানি, জায়নামাজ, তসবিহ, মেসওয়াক সঙ্গে নিয়ে হেফাজত সদস্যরা এতে অংশ নিচ্ছেন। হেফাজতের ঢাকা মহানগরীর প্রচার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ জানান, যাত্রাবাড়ী এলাকায় মুফতি আজহারুল ইসলাম ও মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, কাঁচপুর এলাকায় থাকবেন মাওলানা আজিজুল হক ও মাওলানা আবদুল কাদের, বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় মধুপুরের পীর সাহেব মাওলানা আবদুল হামিদ ও মাওলানা আবু ইউসুফ, আমিনবাজার এলাকায় মাওলানা মামুনুল হক ও মাওলানা লোকমান মাজহারী, গাবতলী-আমিনবাজার থেকে বলিয়ারপুর পর্যন্ত মাওলানা মোস্তফা আজাদ এবং উত্তরা থেকে টঙ্গী-আবদুল্লাপুর পর্যন্ত স্পটে মুফতি মাসুদুল করীম নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়া অন্যান্য স্পটে কেন্দ্রীয় নেতারা পৃথকভাবে নেতৃত্ব দেবেন।

আপাতত ছয়টি পয়েন্টের কথা ঘোষণা হলেও টার্গেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে অবরোধ পয়েন্টের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও দাবি করছেন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা। কর্মসূচি শেষে নেতাকর্মীরা যার যার গন্তব্যে চলে যাবেন এমন নির্দেশনা থাকলেও ব্যতিক্রম কিছু ঘটলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা। হেফাজত যুগ্ম মহাসচিব মহিউদ্দিন রুহী জানিয়েছেন, “অবরোধ কর্মসূচিতে বিভিন্ন পয়েন্টে হেফাজত স্কোয়াডের ৫০ হাজার সদস্য অবস্থান নেবেন। যাতে কেউ অনুপ্রবেশ করে নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে এ লক্ষ্যে এ স্কোয়াড গঠন করা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা ও অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা-হেলমেট পরিহিত এসব সদস্য ঢাকার ছয়টি পয়েন্টে অবস্থান নেবেন। এর মধ্যে গাবতলী-আমিনবাজার, টঙ্গী ব্রিজ এবং কাঁচপুর ব্রিজ পয়েন্টে ১০ হাজার করে এবং বাকি পয়েন্টগুলোতে ৫ হাজার করে হেফাজতে ইসলামের স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন।”

তবে এ অবরোধে নাশকতা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন পুলিশের ৩৫ হাজার ও র‌্যাবের ৫ হাজার সদস্যও। শনিবার রাত থেকেই টহল দিতে শুরু করেছেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)-এর ৪০ প্লাটুন। অরাজকতাসহ যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থাও রয়েছে কঠোর অবস্থানে। এছাড়া সকাল-সন্ধ্যা ঢাকার আকাশজুড়ে পর্যবেক্ষণে থাকবে র্যাবের হেলিকপ্টার। একই সঙ্গে বৃত্তাকার নৌপথে টহল দেবে পুলিশের একাধিক টিম। হেফাজতের ছয়টি অবস্থানের কাছেই থাকবেন ভ্রাম্যমাণ আদালতও। আর্মড পার্সোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি), রায়ট কন্ট্রোল কার (আরসিসি), সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামানসহ নাশকতা ঠেকানোর সরঞ্জাম থাকবে ঢাকার সব প্রবেশমুখে। আর কর্মসূচির বিষয়টি মনিটরিং করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সেল। পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, তাদের কাছে খবর রয়েছে, হেফাজতে ইসলাম রাজধানীর ছয় প্রবেশমুখে তাদের ১৩ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। সেক্ষেত্রে পুলিশ যে কোনো ভাবে তাদের সরিয়ে দেবে। তাতে যদি বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষ দেখা দেয়- এ থেকেও পিছপা হবে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেছেন, “হেফাজতে ইসলাম যদি শান্তিপূর্ণ তাদের কর্মসূচি পালন করে তা হলে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হবে না। তবে আজকের কর্মসূচিতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কঠোর হাতে তাদের দমন করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের কাছে গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া খবর রয়েছে- অবরোধে জঙ্গিবাদী শিবির কর্মীরা নাশকতার চেষ্টা চালাবে।” সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ বিষয়ে কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, বিজিবি মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “শনিবার রাতেই ২০ প্লাটুন মোতায়েন করা হয়েছে। রোববার আরও ২০ প্লাটুন মোতায়েন করা হবে। অবরোধের সময় যদি কোনো বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, সেজন্যে আরও সদস্যকে রাখা হয়েছে প্রস্তুত। তিনি বলেন, যেসব স্থানে অবস্থান নেবেন হেফাজত কর্মীরা, সেসব স্থানগুলো পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়েছে বিজিবি। তিনি বলেন, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ শহরে পোশাক শ্রমিকদের অসন্তোষের কারণে আগে থেকেই বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। অবরোধ কর্মসূচির সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র না থাকলেও প্রয়োজনে তাদেরকেও ব্যবহার করা হবে।”

র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান বলেছেন, “হেফাজতে ইসলাম তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবে বলে আমরা আশা করছি। কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটলে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, হেফাজতের ব্যানারে জামায়াত-শিবিরের লোকজন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে বলে খবর রয়েছে। কিন্তু তারা যেন কোনো ধরনের অরাজকতার সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে র‌্যাব কাজ করছে। ইতোমধ্যে রাজধানী ও তার আশপাশ এলাকায় র‌্যাবের টহল চলছে। গোয়েন্দা ইউনিটও সন্দেহভাজন এলাকাগুলো নজরদারির মধ্যে রেখেছে।” র‌্যাব সূত্র জানায়, অবরোধে র‌্যাবের ৫ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া অবরোধ পর্যবেক্ষণে র‌্যাবের দুটি হেলিকপ্টার সকাল থেকেই ঢাকার আকাশে উড়বে। এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, জামায়াত-শিবিরের ৫ শতাধিক ক্যাডার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় এসে অবস্থান করছেন। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম জানান, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বেশ কিছু `ক্যাডার` হেফাজতে ইসলামের অবরোধে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তারা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির করার চেষ্টা করছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, হেফাজত কর্মীরা ফজরের নামাযের পরপরই মাঠে নেমেছেন। আর তারও এক ঘণ্টা আগেই সব স্পটে অবস্থান নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হেফাজত কর্মীরা যদি কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা চালান, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অ্যাকশনে গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেবে। সূত্রটি জানায়, পুলিশের কাছে প্রয়োজনীয় সকল কিছুই সরবরাহ করা হয়েছে। ৬টি স্পটে কমপক্ষে দু’টি করে পুলিশের সাঁজোয়া যান রয়েছে।  সূত্রটি বলেছে, হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে রাজধানীর প্রবেশমুখ গুলোতে। কিন্তু ডিএমপি’র কোনো এলাকায় তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। রাজধানীতে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে- এ কারণেই সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বেশ কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বৈঠকের নির্দেশ অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, যেন মাদ্রাসায় বহিরাগত কোনো ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়া না হয়। এ অনুরোধের পাশাপাশি পুলিশ নজরদারিতে রেখেছে মাদ্রাসাগুলোকে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না। তবে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ। এদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আশঙ্কা করছে, হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচিতে সুযোগ নিতে পারে শিবির। হেফাজতের সঙ্গে মিশে গিয়ে সকাল থেকে তারা বিশৃঙ্খলা করতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এই কর্মসূচিকে ঘিরে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিবির কর্মীরা রাজধানীতে অবস্থান করছেন।

গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। শনিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মতিঝিলের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় মতিঝিল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩০ শিবির কর্মীকে আটক করে। মতিঝিল জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “শিবির কর্মীদের গোপন বৈঠকের খবর পাওয়া মাত্রই আমরা অভিযান পরিচালনা করে ৩০ জনকে আটক করি। পাশাপাশি শিবিরের অতর্কিত হামলায় পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়। শিবির কর্মীরা যেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটাতে পারে সে বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতার সুযোগ নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শিবির কর্মীরা রাজধানীতে এসেছেন। অবরোধ কর্মসূচি হেফাজতের হলেও ওই কর্মসূচিতে নিজেদের শক্তি দেখাতে শিবিরের এই তৎপরতা। কর্মসূচিকে ঘিরে বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্যও শিবির তৎপর রয়েছে বলেও জানা গেছে।

অন্যদিকে শনিবার দুপুরের পর ১৮ দলের সমাবেশে শিবির কর্মীদের সশস্ত্র অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। হাতে লাঠি নিয়ে সরকারবিরোধী অশ্লীল শ্লোগান থেকে শুরু করে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তি দাবি করে নানা শ্লোগান দেন তারা। সমাবেশের পুরোটা সময় মতিঝিল, দৈনিক বাংলা এবং ফকিরাপুল এলাকা ছিল শিবিরের দখলে। সমাবেশে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিবির কর্মীদের দেখা যায়। এতে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা আশঙ্কা করছেন, রোববার হেফাজতের কর্মসূচিতে সুযোগ নিতে চাচ্ছে শিবির। এ লক্ষ্যে তারা প্রস্তুতিও নিচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে অবহিত করেছেন। উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, শিবির কর্মীরা যেন হেফাজতে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে পুলিশ। রাজধানীর ভেতরেও সুযোগ নিয়ে যেন কোনো প্রকার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি না হয় সে বিষয়েও পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

তবে রাজধানীর কোথাও সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি হেফাজতে ইসলাম। ডিএমপির উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, সমাবেশের ব্যাপারে হেফাজতে ইসলামকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজধানীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে একটি বিশেষ মহলের। সে কারণেই হেফাজতকে রাজধানীর ভেতরে কোথাও সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। তারা অনুমতি ছাড়া কোনো প্রকার জমায়েতের চেষ্টা করলে পুলিশ কঠোরভাবে দমন করবে।